, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


টাকার শোকে তালাবন্ধ ব্যাংকের গেটে কাঁদছেন গ্রাহকরা

  • আপলোড সময় : ২৬-০১-২০২৪ ০৯:৩৩:৪১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৬-০১-২০২৪ ০৯:৩৩:৪১ অপরাহ্ন
টাকার শোকে তালাবন্ধ ব্যাংকের গেটে কাঁদছেন গ্রাহকরা সংগৃহীত
নিরাপদ ভেবে ১০ লাখ টাকা ফিক্স ডিপোজিটসহ মোট সাড়ে ১২ লাখ টাকা নরসিংদীর মহেষপুর ইউনিয়নের আলগী বাজারের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেখেছিলেন ইউসুফ মিয়া।

তবে ওই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন কার্যালয় তালাবদ্ধ করে তার টাকাসহ কয়েকশ গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। 

গত রোববার (২১ জানুয়ারি) বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে হারানো টাকা ফিরে পেতে বার বার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যালয়ে আসছেন ইউসুফসহ ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। জীবনের শেষ সঞ্চয় হারিয়ে অনেকেই কাঁদছেন।  

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল আলগী বাজারে অবস্থানরত ডাচ-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যালয়ে গিয়ে ভুক্তভোগী ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ইউসুফকে পাওয়া যায়। তিনি ব্যাংকের গেটে ঝুলানো তালা ধরে কাঁদছিলেন। সেথানে সাংবাদিকদের দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি। 

ইউসুফ মিয়া বলেন, কৃষিকাজ করে ও বিদেশ থেকে ছেলের পাঠানো টাকা জমিয়েছিলাম। নিরাপদ ভেবে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা ফিক্স ডিপোজিট করি। নিজ অ্যাকাউন্টেও ছিল আরও আড়াই লাখ টাকা। মোট সাড়ে ১২ লাখ টাকা আমার। আমি ব্যাংকে এসে মালিক পাই না, ব্যাংকে কোনো লোক পাই না। আমার টাকা নিয়ে তারা ব্যাংক বন্ধ করে ভেগে গেছে। আমার এতো পরিশ্রমের টাকা আমি কীভাবে পাব?

মহেষপুর ইউনিয়নের আলগী বাখরনগর গ্রামের স্বদেশ দাস নামে আরেক গ্রাহক বলেন, আমি পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী। আমার অ্যাকাউন্টে দুই লাখ টাকা তিন বছর মেয়াদে ব্যাংকটিতে রাখি। এখন টাকা রাখার মেয়াদ এক বছর পাঁচ মাস হয়েছে। লোকমুখে শুনতেছি ব্যাংকের মালিক ব্যাংক ডাকাতি করে পালিয়েছে। পরে আমি সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ব্যাংকে এলে ব্যাংক বন্ধ পাই। এ ঘটনায় শুনে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে রয়েছে। এরপর আমি মঙ্গলবার নরসিংদী ডাচ-বাংলা ব্যাংক অফিসে গেলে তারা আমাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলে। পরে বুধবার আমি লিখিত অভিযোগটি নরসিংদী অফিসে দিয়ে আসি।

আলগী বাজারের টিন ব্যবসায়ী কালাম মিয়া জানান, ২০১৬ সাল থেকে এই ব্যাংকটি চলতেছে। খুব জাঁকজমক ও ভালোভাবে চলতেছিল ব্যাংকটি। আমাদের এলাকায় খেত-খামারে খেটে খাওয়া মানুষজন এ ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছিল। তারা ততটা স্বাবলম্বী ছিল না। শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রামের মানুষের সচেতনতার অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতারণা করে যাচ্ছে। সে আনুমানিক ২০ কোটি টাকার মতো নিয়ে পালিয়েছে। এই এলাকার গরিব-দুঃখী মানুষ কিন্তু লিটনকে দেখে টাকা দেয়নি, বরং ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বিশ্বস্ততার নাম ডাক শুনেই তারা এখানে টাকা রেখেছে। এখন প্রধানমন্ত্রী ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি ওই প্রতারককে ধরে অতিদ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক এবং গরিব-দুঃখী খেটে খাওয়া মানুষের জমানো টাকা অতিদ্রুত গ্রাহকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে নরসিংদী শাখা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যালয়ের ইনচার্জ অলিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ শাখা ডাচ-বাংলা ব্যাংক সকল কিছু দেখা শোনা করে বলে জানান তিনি। পরে সেখানকার রিজিওনাল ম্যানেজার (আরএম) পদে থাকা তৌহিদ নামে একজনের ফোন নম্বর দেন। তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর মিটিংয়ের কথা বলে ফোনটি কেটে দেন।

এদিকে আলগী বাজার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার পর ওই এরিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেলস ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম (৪৫) বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চাপে আব্দুল কাইয়ুম আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পরিবারের। 

অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আলগী বাজার শাখার উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটনের বাড়ি একই উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে। ঘটনার পর থেকে তিনি এখনো পলাতক রয়েছেন।
সেনাকুঞ্জে কুশল বিনিময় করলেন ‍ড. মুহাম্মদ ইউনূস-খালেদা জিয়া

সেনাকুঞ্জে কুশল বিনিময় করলেন ‍ড. মুহাম্মদ ইউনূস-খালেদা জিয়া